রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে কয়েক দিন ধরে কুয়াশার সঙ্গে হিমেল হাওয়া প্রবাহিত হওয়ায় জেঁকে বসেছে শীত। শুক্রবার সারাদিন দেখা মেলেনি সূর্যের। খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছেন না। কেবলমাত্র প্রয়োজনের তাগিতে বের হচ্ছেন নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। এছাড়া নদী ভাঙন এলাকার শ্রমজীবী মানুষ শীতে বাড়তি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় গোয়ালন্দে ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
গোয়ালন্দ উপজেলায় আবহাওয়া অধিপ্তরের কোনো কার্যালয় না থাকলেও প্রয়োজনের তাগিদে উপজেলা প্রশাসন আবহাওয়ার খোঁজ খবর নিয়ে থাকেন।
উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় গোয়ালন্দ উপজেলায় ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা চলছে। যা এ বছরের সর্বনিম্ন বলে মনে করছেন তিনি। তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। ১৮ জানুয়ারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। এরপর তাপমাত্রা স্বাভাবিক হতে পারে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে তীব্র শীতে বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ
দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় দেখা যায়, ঘাট এলাকায় যাত্রীদের উপস্থিতি অনেক কম। নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষজন পেটের তাগিদে বাইরে বের হয়েছেন। লঞ্চ ও ফেরি ঘাটে মানুষের উপস্থিতি অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক কম। কিছু মানুষ এলেও বেশিরভাগ চায়ের দোকানে গরম কাপে চুমুক দিতে দেখা যায়। জরুরি কাজ না থাকলে সহজে কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না। উপজেলার উজানচর, দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম অঞ্চলের নদী ভাঙন এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষজন অনেক কষ্টে দিন পার করছে। শীতে তাদের বাড়তি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
আব্দুর রাজ্জাক (৫৫) একজন ভ্যানচালক। প্রতিদিন গোয়ালন্দ বাজার, দৌলতদিয়া ঘাট এলাকার বিভিন্ন মালামাল পরিবহন করে থাকেন। কিছু মাছের ট্রিপ ধরতে এসেছেন দৌলতদিয়া ঘাটে।
দৌলতদিয়ার ৪ নম্বর ফেরি ঘাটে আলাপকালে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এমন শীত পড়েছে, মনে হচ্ছে জমে যাচ্ছি। এমন শীত আগে দেখিনি। ঘরে স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে রয়েছে। রোজগার না করলে খাওন জুটবে না। ৩০০ টাকা ভাড়ায় দৌলতদিয়ায় আইছি। কনকনে ঠান্ডা বাতাসে দাঁড়ায় থাকতে পারছি না।
ঘাটে কর্তব্যরত বিআইডব্লিউটিসির সহকারী ব্যবস্থাপক আব্দুর রহিম পন্টুনের একটি কক্ষে গিয়ে বসে আছেন। এসময় তিনি বলেন, কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড শীত পড়ছে। এরপর ঘাট এলাকায় শীতের সঙ্গে বাড়তি বাতাস থাকায় ডিউটি করা অনেক কষ্টকর। মাঝে মধ্যে বাতাস উঠলে দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। উপায় না পেয়ে একটু উষ্ণতা নিতে চায়ের দোকানে ঠাঁই নিতে হয়।
আরও পড়ুন: শীতে কাহিল কুড়িগ্রামের মানুষ, হাসপাতালে বাড়ছে শিশুরোগী
দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম বলেন, এর আগে এত ঠান্ডা পড়েনি। আজকে সারাদিন ঘরেই বসে আছি। নদী ভাঙন এলাকার মানুষজন ঠান্ডায় কাতর হয়ে পড়ছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে কিছু কম্বল দিয়েছিল তা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এত মানুষকে এখন কী দেব?
এদিকে প্রচণ্ড ঠান্ডা আর কুয়াশায় শীতকালীন অনেক ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ। ধানের বীজতলা, দানা পেঁয়াজ, সরিষা।
দৌলতদিয়া তোরাপ শেখের পাড়ার কৃষক হুমায়ন আহম্মেদ বলেন, প্রচণ্ড ঠান্ডা আর কুয়াশায় ধানের বীজতলা হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। দুই দিন ধরে বীজতলার ওপর পলিথিন দিয়ে ঘিরে দিচ্ছেন। সরিষা খেতে পোকার আক্রমণ বাড়ার আশঙ্কাও করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকন উজ্জামান বলেন, প্রচণ্ড ঠান্ডা আর কুয়াশায় মুড়িকাটা ও দানা পেঁয়াজের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এ অঞ্চলে পেঁয়াজ তোলা শেষের দিকে। সরিষার অনেক ভালো ফলন হয়েছে। সরিষা খেতে পাতায় এক ধরনের পোকার আক্রমণ হতে পারে। ধানের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ জন্য কৃষকদের সতর্কতার সঙ্গে কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে কাজ করতে বলেছি।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে জেকে বসেছে শীত, বিক্রি বেড়েছে হকার্স মার্কেটে